জপফল নির্ণয়ঃ
অঙ্গুলি দিয়ে গণনা করে জপ্ করলে একগুণ ফল লাভ হয়। অঙ্গুলি পর্বের দ্বারা জপ্ করলে আটগুণ ফল লাভ, জীব পুত্রিকার দ্বারা জপ করলে দশগুণ ফল, শঙ্খ মালায় শতগুণ, প্রবাল মালায় সহস্রগুণ, মণি ও রত্ন মালায় শতগুণ, প্রবাল মালায় সহস্রগুণ, মণি ও রত্ন মালায় অযুতগুণ, স্ফটিক মালায় অযুতগুণ, মুক্তা মালায় লক্ষগুণ, পদ্ম মালায় দশলক্ষগুণ, স্বর্ণ মালায় কোটিগুণ, কুশমূল নির্মিত মালায় বহু লক্ষগুণ এবং রুদাক্ষ মালার জপ করলে অশেষ গুণ ফল লাভ হয়।
কালিকাপুরাণে বলা হয়েছে-“বিভিন্ন মালা থাকার জন্য তার বিভিন্ন ফল লাভ হয়। একটি মালার সঙ্গে অন্য মালা মেশাবে না।এতে ফল লাভের আশা করা যায় না। উল্টে গ্রহদোষ আরো বৃদ্ধি পায়।
মুণ্ডমালা তন্ত্রে বলা হয়েছে, “ধূমাবতীর” মন্ত্র জপ্ করবার সময়ে ধুস্তরের কাষ্ঠনির্মিত মালা ব্যবহার করবে। নরাঙ্গুলির অস্থির দ্বারা মালা তৈরী করে জপ করলে সর্বকামনা পূর্ণ হবে।এবং কামনা বিশেষ ভ্ন্নি ভিন্ন দ্রব্য দ্বারা মালা নির্মাণ করতে হবে।
যেমনঃ-
শত্রুনাশের জন্য পদ্মবীজের মালা।
পাপনাশের জন্য কুশমূল মালা।
পুত্র কামনায় জীবপুত্রিকা মালা।
অভীষ্ট লাভ কামনার মণি রৌপ্য নির্মিত মালা।
বিপুল ধন কামনায় প্রবাল মালা।
বারাহী তন্ত্রে পাওয়া যায়- “সুবর্ণ, মণি, স্ফটিক, শঙ্খ ও প্রবাল দিয়ে মালা নির্মাণ করতে হয়। সেখানে সর্বদা জীবপুত্রিকার মালা ত্যাগ করবেন। পদ্মবীজ, রুদ্রাক্ষা ভদ্রাক্ষ দ্বারা নির্মিত মালা অতি পলপ্রদ।
রবিদোষ খণ্ডনের জন্য মণির মালা শ্রেষ্ঠ।
চন্দ্রের দোষ খণ্ডনের জন্য মুক্তার মালা শ্রেষ্ঠ।
মঙ্গলের দোষ খণ্ডনের জন্য প্রবালের মালা শ্রেষ্ঠ।
বুধের দোষ খণ্ডনের জন্য রৌপ্য মালা শ্রেষ্ঠ। এবং রুদ্রাক্ষের মালাও অতি ফলপ্রদ।
বৃহস্পতির দোষ খণ্ডনের জন্য পদ্মবীজের মালা অতি শুভ।
শুক্রের দোষ খণ্ডনের জন্য স্ফটিকের মালা শ্রেষ্ঠ।
শনির দোষ খণ্ডনের জন্য কুশ মূলের মালা শ্রেষ্ঠ।
রাহুর ও কেতুর দোষ খণ্ডনের জন্য শ্বেত চন্দনের মালা শ্রেষ্ঠ।
বিঃ দ্রঃ- মালা নির্মাণ করে তাকে শোধন করতে হবে। শোধনহীন মালা কোন ফলই দান করে না।
রুদ্রযামল তন্ত্রে বলা হয়েছে-
“অপ্রিতিষ্ঠিতমা লাভির্মন্ত্রং জপতি যো নরঃ।
সর্ব্বং তন্নিষ্ফলং বিদ্যাৎ ক্রুদ্ধা ভবতি দেবতা।।”
সনৎকুমার তন্ত্রে লেখা আছে-“কার্পাস সুতোর দ্বারা গাঁথা মালায় জপ করলে চতুর্বর্গ সিদ্ধি হয়। ঐ সুতো কোন ব্রাক্ষণ কুমারীর দ্বারা প্রস্তুত করতে হবে।”
নীলতারা তন্ত্রে আছে- “যে কুমারীর প্রথম ঋতু হয়েছে, সে যদি মালা গেঁথে দেয় তবে সে মালা সবচেয়ে বেশী ফল দান করে।”
সাদা, লাল বা কালো বর্ণ পট্টসূত্র দ্বারা মালা গেঁথে জপ করতে হবে। এবং-
শান্তি কার্যের জন্য শ্বেতবর্ণ সুতো দরকার।
বশ্যাদি কার্যের জন্য লালবর্ণ সুতো দরকার।
মারণ কার্যের জন্য কালো সুতো দরকার।
আবার, মুক্তি, ঐশ্বর্য ও জয়াদি কাজের জন্য শ্বেতবর্ণ সুতোই জত্তম।
এবং সুতো ত্রিগুণ করে পুনরায় তাকে ত্রিগুণ করে সুন্দরভাবে মালা গ্রন্থন করতে হবে। এবং “অং ওং অং” মন্ত্রে মালা গ্রন্থন করবে। আর সুতোয় যখন বস্তু দেবে- তারপর একটা করে ব্রক্ষগ্রন্থি দিতে হবে।
মুণ্ডমালা তন্ত্রে বলা হয়েছে- “নয়টি অশ্বথ পাতা পদ্মকারে ছড়িয়ে তার উপর মাতৃকামন্ত্র ও মূলমন্ত্র উচ্চারণ করে মালা রাখবে। তারপর “ওঁ সদ্যোজাতং প্রপদ্যামি সদ্যোজাতায় বৈ নমঃ” মন্ত্রে পঞ্চগব্য দ্বারা মালা ধৌত করবে। তারপর
“ওঁ বামদেবায় নমঃ”
ওঁ জ্যেষ্ঠায় নমঃ।
ওঁ রুদ্রায় নমঃ।
ওঁ কালায় নমঃ।
ওঁ কলবিকরণায় নমঃ। ওঁ বলবিকরণায় নমঃ। ওঁ বলপ্রমথয়ে নমঃ। ওঁ সর্ব্বভূতদমনয়ে নমঃ। ওঁ নো মনোন্মথনায় নমঃ।
মন্ত্রে চন্দন ও অগুরু ও কর্পূর দ্বারা মালা লেপন করবে।
তারপরঃ-
“ওঁ অঘোরেভ্যোহথ ঘোরেভ্যো ঘোরঘোরতরেভ্যঃ
সর্ব্বতঃ সর্ব্বসর্ব্বেভ্যো নমস্তেহস্তু রুদ্রারুপেভ্যঃ।।
মন্ত্রে মালা ধূপিত করবে। আবার,
“ওঁ তৎপুরুষায় বিদ্মহে মহাদেবায় ধীমহি তন্নো রুদ্রঃ
প্রচোদয়াৎ।” মন্ত্রে মালা চন্দন সিক্ত করবে।
তারপর-“ওঁ ঈশানঃ সর্ব্ববিদ্যানামীশ্বরঃ সর্ব্বভূতানাং ব্রক্ষাধিপতিব্রাক্ষণোহধিপতিঃ ব্রক্ষা শিবো মেহস্তু সদাশিবম্।।” মন্ত্রে মালায় প্রতি বীজে শতবার জপ করবে।
বারাহী তন্ত্রে আছে- মালার উপরে মায়াবীজ লিখে “হ্রীং মালে মালে মহামালে সর্ব্বতত্ত্বস্বরুপিণি। চতুর্ব্বর্গস্তয়ি ন্যস্তস্তস্মান্নে সিদ্বিদা ভব।” মন্ত্র পাঠ করে রক্ত কুসুম দ্বারা পূজা করবেন।